Wednesday, May 1, 2013

আহলে হাদীসের আদর্শিক পরিচয়


আহলে হাদীসের আদর্শিক পরিচয়

শাব্দিক অর্থে ‘আহলে হাদীস’ বলতে বুঝায় হাদীসওয়ালা বা হাদীসের অনুসারী। এখানে ‘হাদীস’ বলতে ইসলামের পরিভাষাগত ‘হাদীস’ নয়। বরং রায়, বিদআত ও বাতিলের বিপরীতে ‘সুন্নাহ’ কেই বুঝান হয়েছে। কুরআন ও হাদীস বা রাসূলুল্লাহর (সঃ) জীবন পদ্ধতিকে সাধারণ অর্থে সুন্নাহ বলা হয়ে থাকে। তাই সঙ্গত কারণেই ‘আহলে হাদীস’ অর্থ হচ্ছে কুরআন হাদীসের অনুসারী। আর পারিভাষিক অর্থে আহলে হাদীস বলতে বুঝায়, যারা সর্বাবস্থায় কুরআন-হাদীস হতে সরাসরি অথবা তার ভিত্তিতে প্রদত্ত সমাধানকে সকল ক্ষেত্রে চূড়ান্ত মনে করে এবং নিঃর্শভাবে মেনে নেয়।
সাহাবী ও তাবেয়ীদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল- তাঁরা সর্বক্ষেত্রে রায় ও কিয়াসের উপর কুরআন ও হাদীসকে অগ্রাধিকার দিতেন। এজন্য তাঁরা ‘আহলে সুন্নাহ’ ও ‘আহলে হাদীস’ উভয় নামেই পরিচিত হতেন। প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (মৃঃ ১১০ হিঃ) হাদীসের সনদ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যদি দেখা যেত যে, বর্ণনাকারী ‘আহলে সুন্নাহ’ দলভূক্ত তাহলে তাঁদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করা হত। কিন্তু ‘আহলে দিআত’ দলভূক্ত হলে তার বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করা হত না। (মুসলিম: মুকাদ্দামা) এখানে সাহাবী ও তাবেয়ীদেরকেই ‘আহলে সুন্নাহ’ বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্যদিকে তাদেরকে ‘আহলে হাদীস’ নামে ভূষিত করেছেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) (মৃঃ ৭৪ হিঃ)। তিনি মুসলিম তরুণদের দেখলে খুশী হয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতেন- “তোমরাই আমাদের পরবর্তী বংশধর ও পরবর্তী আহলে হাদীস।”
দুনিয়ার বুকে কুরআন-হাদীসের শাসন প্রতিষ্ঠা, দলবন্দীর নিরসনকল্পেই মূলতঃ আহলে হাদীস আন্দোলনের সৃষ্টি। জাতির পুনর্গঠন ও সংস্কারসহ বিচ্ছিন্ন মুসলিম সমাজকে এক ও অভিন্ন মহাজাতিতে পরিণত করার উদ্দেশ্যেই এই আন্দোলন তার সকল কার্য পরিচালনা করে থাকে।
যে সকল বৈশিষ্ট্যের কারণে আহলে হাদীসকে আহলে হাদীস বলা হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে (ক) কুরআন হাদীসকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়া (খ) ঐ দুই বস্তুকে একজন খাঁটি মুসলমানের জন্য যথার্থ পথ প্রদর্শক মনে করা (গ) তাকলীদের বন্ধনকে অস্বীকার করা (ঘ) ধর্মের নামে মাযহাবী সংকীর্ণতার উধের্্ব থাকা এবং (ঙ) ইসলামী আইনের ক্ষেত্রে স্থান ও কালের দাবী পূরণে ইজতিহাদের পথ কিয়ামত পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে বিশ্বাস করা। আর এসব কারণেই আহলে হাদীসগণ সর্বদা বিদআতী ও মুকালি্লদদের রোষানলে পড়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা নানাবিধ অপ্রাপ্য দুর্নামের ভাগী হয়েছেন। কেই কেউ তাঁদেরকে অনৈতিহাসিকভাবে অথবা নিন্দার্থে ওয়াহহাবী, যায়দী, শীআ প্রভৃতি নামে আখ্যায়িত করেছেন। কেউবা তাচ্ছিল্যবশতঃ তাঁদেরকে রাফাদানী, গয়ের মুকালি্লদ ইত্যাদি বলেছে। আবার কেউ কেউ তো আরো দশ কদম এগিয়ে তাঁদেরকে বেদীন বা লা-মাযহাবী এবং বিদআতী, জাহান্নামী ও প্রথম পথভ্রষ্ট দল হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজের মনের বিষাদগার করেছে।
অথচ এটা তো সবারই জানা থাকার কথা যে, আহলে হাদীস দলটি নতুন কোন দল বা মাযহাব নয়। বরং এটা হচ্ছে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, যা সাহাবীদের যুগ থেকে শুরু হয়ে প্রতি যুগে যুগে অব্যাহত ছিল এবং আজও মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই অব্যাহত আছে।
হিজরী ১ম শতাব্দী
এ শতাব্দীর প্রথম দিকে সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ‘আহলে হাদীস’ নামে অভিহিত হতেন। তখন ‘মুসলমান’, ‘আহলে সুন্নাহ’ এবং ‘আহলে হাদীস’ শব্দগুলির তাৎপর্য এক ও অভিন্ন ছিল। সুতরাং ‘আহলে হাদীস’ ছিল ঐ সময়ের মুসলমানদের একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম।
এ শতাব্দীর প্রথমার্ধের শেষভাগ থেকে বিদআতী এবং রায়পন্থীদের উত্থান হয়। ৩য় খলীফা হযরত উসমান (রাঃ) (মৃঃ ৩৫ হিঃ) এর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে হযরত আলী (রাঃ) (মৃঃ ৪০ হিঃ) ও মুয়াবিয়া (মৃঃ ৫৯ হিঃ) এর মধ্যকার দ্বন্দ্বের রেশ ধরে খারেজী, শীআ, মুরজিয়া প্রভৃতি ধর্মীয় মতবাদ এবং তা থেকে বিভিন্ন ফিরকা বা দলের সৃষ্টি হয়। এ সময় আহলে সুন্নাহ বা আহলে হাদীসরা এসব বিদআতী ধর্মীয় মতবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার ও প্রতিরোধ আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
এই যুগে মক্কা-মদীনাসহ রোম, আলজিরিয়া, সিরিয়া, আজারবাইজান, স্পেন, আবিসিনিয়া এক কথায় ইউরোপ, আফ্রিকা, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, নিকট প্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য এবং এশিয়ার সমুদয় মুসলিম উপনিবেশের সমস্ত অথবা অধিকাংশ অধিবাসীরা আহলে হাদীস ছিলেন।
হিজরী ২য় শতাব্দী
এ যুগে রায়পন্থী এবং বিদআতীদের ব্যাপক প্রসার ঘটে। জাহমিয়া, মুরাজিয় এবং মুতাজিলাদের মত কট্টরপন্থী ভ্রান্ত ফিরকাগুলির উৎপাতের মুখে সত্যপন্থি সাধারণ মুসলমানগণ দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিল। এই মহা সংকট উত্তরণের জন্য আহলে হাদীসগণ তাদের সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এসময় বিশিষ্ট কাদারিয়া নেতা গায়লান দামেষ্কী (মৃঃ ১০৫ হিঃ) এর সাথে আহলে হাদীস বিদ্বানদের কয়েকবার বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং খলীফা হিশাম (১০৫-১০২৫ হিঃ) এর উদ্যোগে আহুত বিতর্ক সভায় পরাজিত হওয়ায় তাকে শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করার ঘটনা প্রবাহ প্রকৃষ্ট প্রমাণ বহন করছে।
এ যুগের কয়েকজন বিশিষ্ট আহলে হাদীস হলেন-
১. খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয (মৃঃ ১০১ হিঃ)
২. মাকহুল বিন আব্দুল্লাহ সিন্ধী (মৃঃ ১১৩ হিঃ)
৩. আমর বিন মুসলিম বাহেলী (মৃঃ ১২৩ হিঃ)
৪. ইমাম আওযাঈ (মৃঃ ১৫৭ হিঃ)
৫. ইমাম মালেক (মৃঃ ১৭৯ হিঃ)
৬. ফযায়েল বিন আয়ায (মৃঃ ১৮৭ হিঃ)
হিজরী ৩য় শতাব্দী
এ যুগে ভারত ও গ্রীক দর্শন বিজড়িত যুক্তিবাদের প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ মুতাজেলী বুদ্ধজীবিগণ এ সময়ের মুসলিম খলীফা বিশেষতঃ মামুন (১৯৮-২১৮ হিঃ), মুতাছিম (২১৮-২২৭ হিঃ) এবং ওয়াছিক বিল্লাহ (২২৭-২৩২ হিঃ) প্রমূখাতের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করলে তাদের বিদআতী আন্দোলন খুবই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। ফলে এই আহলে হাদীসরা অবর্ণনীয় নির্যাতনের স্বীকার হন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের (মৃঃ ২৪১ হিঃ) উপর এ সময়ে বাতিলপরন্থীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন চালানো হয়।
এযুগের শেষার্ধে বিদআতীগণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা হতে বঞ্চিত হতে থাকলে আহলে হাদীসরা স্বাধীনভাবে তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। শত শত আহলে হাদীস বিদ্বান এ যুগে মূল্যবান লেখনীয় মাধ্যমে তাঁদের আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত ও পাকাপোক্ত করেন। যার ফলশ্রুতিতে হিজরী ৩য় শতাব্দী ‘হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের স্বর্ণযুগ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
এ সময়ের বিখ্যাত কয়েকজন আহলে হাদীস মহান কাজটি সম্পন্ন করেন।
১. ইমাম শাফেঈ (মৃঃ ২০৪ হিঃ)
২. আবু ওবায়েদ কাসেম বিন সাল্লাম (মৃঃ ২২৪ হিঃ)
৩. ইমাম মুসলিম (মৃঃ ২৬১ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ৪র্থ শতাব্দী
এ সময় ইসলামের মূল কেন্দ্র মক্কা-মদীনাসহ পৃথিবীর সকল মুসলিম উপনিবেশ সমূহে আহলে হাদীসদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রখ্যাত হানাফী ভূ-পর্যটক শামসুদ্দীন আল মাকদেসীর (মৃঃ ৩৭৫ হিঃ) ভারতবর্ষের সিন্ধু রাজ্যের অধিবাসীদের মাযহাব বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন-
أكثر هم أصحاب حديث
অর্থাৎ তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন আহলে হাদীস।
এ যুগের কয়েকজন প্রখ্যাত আহলে হাদীস হলেন-
১. আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন খালাক (মৃঃ ৩১১ হিঃ)
২. ইমাম ইবনে খুযাইমা (মৃঃ ৩১১ হিঃ)
৩. আবুল হাসান আশআরী (মৃঃ ৩২৪ হিঃ)
৪. ওবায়দুল্লাহ বিন মুঃ বিন বাত্তাহ (মৃঃ ৩৮৭ হিঃ)
৫. ইব্রাহীম বিন মুঃ দেবলী (মৃঃ ৩৪৫ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ৫ম শতব্দী
এ যুগে মাযহাবী তাকলীদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (মৃঃ ১১১৪ হিঃ) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ এর মধ্যে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী মাযহাবসমূহের মধ্যে বহু ঝগড়া বিবাদ ও লেখনী পরিচালিত হয়- যা মুসলমানদের সামাজিক ঐক্য সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়। এ সময়ে আহলে হাদীসদের সাথে মাযহাবীদের অনেক তর্ক যুদ্ধ হয়।
এযুগের কয়েকজন বিখ্যাত আহলে হাদীসের নাম নিম্নরূপঃ
১. আবু আব্দুল্লাহ হাকিম নিশাপুরী (মৃঃ ৪০৫ হিঃ)
২. আঃ কাহির বিন তাহির বাগদাদী (মৃঃ ৪২৯ হিঃ)
৩. ইমাম ইবনে হাযয আন্দালুসী (মৃঃ ৪৪৯ হিঃ)
৪. আঃ রহমান বিন ইসমাইল ছাবুনী (মৃঃ ৪৪৯ হিঃ)
৫. ইমাম বায়হাকী (মৃঃ ৪৫৮ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দী
ইমাম গাজ্জালী (মৃঃ ৫০৫ হিঃ) বলেন, ‘এই সময় তাকলীদ চরম পর্যায়ে পেঁৗছে যায়।’ এ থেকে আমরা এটাও অনুমান করতে পারি যে, ইমাম বা অনুসরণীয় মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা প্রতিপক্ষের নিকৃষ্টতা প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বানাউট (মওযু) হাদীসগুলি এই সময়েই তৈরী করা হয়। ইসলামের এই দূর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আহলে হাদীসরা তাঁদের অব্যাহত কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে উক্ত বিভ্রান্তি থেকে দূরে রাখার সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন।
এ যুগের কয়েকজন বিশিষ্ট আহলে হাদীস হলেন-
১. শায়খ আলী বিন আমর বিন হাকাম লাহোরী (মৃঃ ৫২৯ হিঃ)
২. শায়খ মুঃ বিন আব্দুল করীম শাহরস্তানী (মৃঃ ৫৪৮ হিঃ)
৩. শায়খ আঃ কাদের জিলানী (মৃঃ ৫৬১ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ৭ম শতাব্দী
এ যুগে আহলে হাদীসগণ একটা ভীষণ দূর্ষোপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেন। কারণ, এ সময়ে দর্শনশাস্ত্রে কটুতর্ক বিভিন্ন মুজতাহিদ ইমামের ফেকহী মতপার্থক্য, ছুফীবাদ বা বৈরাগ্যবাদের ছড়াছড়ি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। অন্য দিকে তাকলিদের আবশ্যকতা নিয়ে মুকাল্লেদগণের বাড়াবাড়ি চরমে পেঁৗছে। এসবের পরিণামে মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে উঠে এবং মুসলমানদের ঈমানী শক্তি ক্রমশঃ লোপ পেতে থাকে। আর এজন্যই আমরা দেখতে পাই যে, একজন শীআ মন্ত্রীর ষড়ষন্ত্র এবং হানাফী-শাফেয়ী দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে অবশেষে ৬৫৬ হিজরীতে হালাকু খাঁর আক্রমনে আব্বাসীয় খেলাফত তথা ইসলামী সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়।
উপরন্তু মুকালি্লদগণের বাড়াবাড়ির কারণে সুলতান রুকনুদ্দিন বায়বারাসের খেলাফতের (৬৫৮-৬৭৬ হিঃ) গোড়ার দিকে প্রচলিত চার মাযহাবকে এক সরকারী অধ্যাদেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠনিকভাবে স্বীকৃতী দেওয়া হয়। মিসরীয় রাজধানীতে বিচারালয়ে সর্ব প্রথম চার মাযহাবের লোকদের জন্য পৃথক পৃথক কাযী বা বিচারক নিয়োগ করা হয়, যা ৬৬৫ হিঃ থেকে ইসলাম জগতের সর্বত্র চালু হয়ে যায়। এই চার মাযহাবের বহিভর্ূত কোন উক্তি বা সিদ্ধান্ত কুরআন ও সহীহ হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হলেও তা অনুসরণ করা নিষিদ্ধ বলে গণ্য হয়। এই কঠিন সময়েও আমরা আহলে হাদীসরা জীবনবাজী রেখে ময়দানে সক্রিয় ছিলেন।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন-
১. শায়খ হাসান বিন মুঃ বিন হাসান ছাগানী (মৃঃ ৬৫০ হিঃ)
২. শায়খ বাহাউদ্দীন যাকারিয়া (মৃঃ ৬৬৬ হিঃ)
৩. শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (মৃঃ ৭০০ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ৮ম শতাব্দী
এ যুগে প্রচলিত চার মাযহাব ব্যতীরেকে অন্যান্য সকল মাযহাব জনগণের দৈনন্দিন জীবন থেকে বিদায় নিতে থাকে। চার মাযহাবের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দিন দিন বাড়তে থাকে। এই কঠিন সময়েও দেখা যায় যে, আহলে হাদীসরা সম্পূর্ণ আপোষহীনভাবে বিভিন্ন উপায়ে তাদের দাওয়াত ও তাবলীগ চালিয়ে গেছেন।
এ যুগের বিশিষ্ট কয়েকজন আহলে হাদীস হচ্ছেন-
১. শায়খ নিযামুদ্দীন আউলিয়া (মৃঃ ৭২৫ হিঃ)
২. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (মৃঃ ৭২৮ হিঃ)
৩. ইমাম ইবনে কাইয়িম জাওযিয়া (মৃঃ ৭৫১ হিঃ)
৪. হাফেয ইবনে কাহীর (মৃঃ ৭৭৪ হিঃ)
৫. আবুল খায়ের দেহলভী (মৃঃ ৭৪৯ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ৯ম শতাব্দী
৮ম শতাব্দীতে উদ্ভূত চার মাযহাবের অন্তর্দ্বন্দ্ব ৯ম শতাব্দীতে চরম আকার ধারণ করে। একজন মুকালি্লদ ব্যক্তি এতটাই অনুদার বা অন্ধ অনুসারী হয় যে সে তার প্রতিপক্ষকে কিছুতেই মেনে নিতে রাজী নয়। সে নিজের সিদ্ধান্তকে এতটাই সত্য মনে করে যে, প্রতিপক্ষ মাযহাবের সিদ্ধান্তকে তার নিকট একেবারেই অপ্রামাণিক বলে মনে হয়। এই যুগে এক মাযহাবের লোকেরা অন্য মাযহাবের লোকদের পিছনে নাময পড়াটাও অবৈধ মনে করে। এ অনুদার দৃষ্টিভঙ্গির ফল হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর স্থায়ী বিভক্তি। ফলে ৮০১ হিজরীতে সুলতান ফারজ বিন বারকুক (মৃঃ ৮১৫ হিঃ) মুসলিম ঐক্যের প্রাণ কেন্দ্র কাবা গৃহের চারপাশে চার মাযহাবের জন্য পৃথক পৃথক চার মুসাল্লাহ কায়েম করেন। ইসলামের এহেন দুর্দিনেও আহলে হাদীসরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
এসময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-
১. লায়ায আবুল ফযল যয়নুদ্দীন আঃ রহীম ইরাকী (মৃঃ ৮০৬ হিঃ)
২. শায়খ ইবনে হাজার আসকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)
৩. কাযী শিহাবুদ্দীন দৌলতাবাদী (মৃঃ ৮৪৯ হিঃ)
৪. শায়খ ইয়াকুব বিন আঃ রহমান হাশেমী (মৃঃ ৮৪৩ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ১০ম শতাব্দী
এই শতাব্দীতে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র মাযহাবী আরো বিস্তার লাভ করে। এমনকি কোন কোন মুসলিম সম্রাট ইসলামেকে নিজস্ব ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করে নতুন নামে এবং ভিন্ন পরিচয়ে পেশ করার অপপ্রয়াশে লিপ্ত হয়। যেমন সম্রাট আকবর (৯৬২-১০১২ হিঃ) কতর্ৃক ‘দীনে এলাহী’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এ সময়ে মুসলি ঐক্যেকে ওটুট রাখার জন্য আহলে হাদীসগণ তাদের কার্যক্রম আরো জোরদার করেন। ফলে তাঁরা বাতিলপন্থিদের রোষানলে পতিত হন। ‘দীনে এলাহী’ এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার করণে। প্রখ্যাত মুহাদ্দীস মুনাওয়ার বিন আঃ মজীদ লাহোরীকে ৫ বছরের কারাবরণ করতে হয়।
এযুগের নামকরা আরো কয়েকজন আহলে হাদীস হলেন-
১. ইমাম শামসুদ্দীন সাখাভী (মৃঃ ৯০২ হিঃ)
২. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)
৩. শায়খ রফিউদ্দীন ছাকাবী (মৃঃ ৯৫৪ হিঃ)
৪. শায়খ মুঃ তাহের পাট্টনী (মৃঃ ৯৮০ হিঃ)
৫. শায়খ আঃ ওয়াহহাব শারানী (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ১১শ শতাব্দী
এ যুগে আহলে হাদীসরা সমাজ সংস্কারের বাস্তব কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি হাতে নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হন। এ সময় বিশিষ্ট আহলে হাদীস শায়খ আহমদ সারহিন্দী ওরফে মুজাদ্দিদ আলফে সানী (মৃঃ ১০৩৪ হিঃ) সামজ থেকে শিরক ও বিদআত দূর করার কার্যক্রম শুরু করলে, সম্রাট জাহাংগীরের সময় (১০১৩-১০৩৫ হিঃ) প্রায় তিন বছর কারাবরণ করেন।
এ যুগে বিশিষ্ট আরো কয়েকজন আহলে হাদীস হলেন-
১. শায়খ মুনাওয়ার বিন আঃ মজীদ লাহোরী (মৃঃ ১০১০ হিঃ)
২. শায়খ মুঃ সাঈদ বিন আহমদ সারাহিন্দী (মৃঃ ১০৭০ হিঃ)
৩. শায়খ আলাউদ্দীন মিসরী (মৃঃ ১০৭৭ হিঃ)
৪. শায়খ আবুল মাআবী সিন্ধী (মৃঃ ১০৮৮ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ১২শ শতাব্দী
এ যুগে ইসলামের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে একমাত্র আন্দোলন হিসেবে হেজায, নজদ, ইয়ামন, হিন্দুস্তান-তথা মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বত্র আহলে হাদীসদের দাওয়াত ও তাবলীদ পরিচালিত হয়।
এ সময়ের বিশিষ্ট কয়েকজন আহলে হাদীস হলেন-
১. খাজা আজম বিন শরফুদ্দীন (মৃঃ ১১১৪ হিঃ)
২. শায়খ জামালুদ্দীন আব্দুল্লাহ বিন সালেম বসরী (মৃঃ ১১৩৪ হিঃ)
৩. শায়খ আবু তাহের মুঃ মাদানী (মৃঃ ১১৪৫ হিঃ)
৪. মুঃ বিন আঃ ওয়াহহাব নজদী (মৃঃ ১১৭৯ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ১৩শ শতাব্দী
১১শ ও ১২শ হিজরী শতাব্দীদ্বয়ের আহলে হাদীসগণের সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে এ যুগের আহলে হাদীসরা বেশ খানিকটা সংগঠিত হয়ে উঠতে সক্ষম হন। প্রতিক্রিফা হিসেবে বিরোধীরা আহলে হাদীসদেরকে যায়দী, নজদী, ওয়াহহাবী, শীআ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে বিভ্রান্ত ছড়াতে থাকে। বৃটিশ সরকারও এ সব অপপ্রচারে অনেক সহায়তা দিতে থাকে। ফলে ভারতে স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়।
এ সময়ের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ আহলে হাদীস হলেন-
১. শহীদ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী (মৃঃ ১২৪৬ হিঃ)
২. শহীদ সৈয়দ মুঃ ইসমাঈল (মৃঃ ১২৪৬ হিঃ)
৩. আল্লামা মুঃ বিন আলী শওকানী (মৃঃ ১২৫০ হিঃ)
৪. মাওলানা বেলায়েত আলী (মৃঃ ১২৬৯ হিঃ)
৫. মাওলানা এনায়েত আলী (মৃঃ ১২৭৪ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ১৪শ শতাব্দী
এ যুগে আহলে হাদীসদের দাওয়াত ও তাবলীগী কার্যক্রম আরো ব্যাপকতা লাভ করে। আহলে হাদীসদের সংগ্রামের মুখে বৃটিশ-ভারত সরকার ১৩০১ হিজরীতে ‘আহলে হাদীস’ কে ‘ওয়াহহাবী’ বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে ৮০১ হিজরী সনে কাবাশরীফে প্রচলিত চার মাযহাবের নামে প্রতিষ্ঠিত চার মুছাল্লা আহলে হাদীসদের অব্যাহত দাওয়াত ও জিহাদের ফলে ১৩৪৩ হিঃ সনে উতখাৎ হয়ে যায়। এভাবে গোটা বিশ্বে তারা বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে ইসলামকে তার মূল শ্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে থাকেন। ফলে তাঁরা সাহাবীদের যথার্থ উত্তরসূরী এবং সঠিক ইসলামের ধারক ও বাহক হিসেবে সর্বত্র পরিচিতি লাভ করেন।
Ency. of Islam, Muslim World, Indian Muslim
ইত্যাদি গ্রন্থে ‘আহলে হাদীস’ শব্দের ব্যাখ্যা দেখলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। তাছাড়া শায়খ নযীর হোসাইন দেহলভী (মৃঃ ১৩২০ হিঃ) এবং তাঁর শিষ্যমণ্ডলী পাক-ভারত উপমহাদেশ ছাড়াও চীন, কাবুল, গযনী, বুখারা, সমরকন্দ, হেজায় তথা মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বত্র এই আহলে হাদীসদের দাওয়াতকে একটি সার্বজনীন আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
এ যুগের আরো কয়েকজন বিশিষ্ট আহলে হাদীস হলেন-
১. নবাব ছিদ্দিক হাসান খান ভূপালী (মৃঃ ১৩০৭ হিঃ)
২. আল্লামা আঃ রহমান মুবারকপুরী (মৃঃ ১৩৫৩ হিঃ)
৩. শায়খ আবদুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (মৃঃ ১৩৮০ হিঃ)
৪. শায়খ ছানাউল্লাহ অমৃতসয়ী (মৃঃ ১৩৬৭ হিঃ)
প্রমুখ।
হিজরী ১৫শ শতাব্দী / বর্তমান যুগ
বর্তমান যুগে বিশ্বের যেসব স্থানে মুসলমানদের অবস্থান আছে সেসব স্থানে অল্প-বিস্তর আহলে হাদীসদের বসবাস কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়। কারণ আহলে হাদীসরা যে যেখানে আছেন সেখানেই তারা সাধমত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে এই দাওয়াত অব্যাহত গতিতে চলছে। বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, ভারত প্রভৃতি দেশসমূহে ‘আহলে হাদীস’ নামে, মিসর, সূদান, শ্রীলংকা, প্রভৃতি দেশে ‘আনছারুসসুন্নাহ’ নামে সৌদি আবর, কুয়েত প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ‘সালাফী’ নামে ইন্দোনেশিয়াতে ‘মোহাম্মদী’ নামে এবং আফগানিস্তানে জামাআতুদ দাওয়াহ ইলাল কিতাব ওয়াসসুন্নাহ নামে এই দাওয়াত আজও চালু আছে।
পৃথিবীর সর্বত্রই এই আন্দোলনকে সরকারী বা বেসরকারী ভাবে সৃষ্ট হাজারো বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে এই যে, সকল বাঁধার প্রাচীর অতিক্রম করে পৃথিবীর কোন কোন এলাকায় আহলে হাদীসগণ ইতোমধ্যেই স্বাধীনভূমি প্রতিষ্ঠা করতঃ তাতে নির্ভেজাল কুরআন-সুন্নাহর শাশ্বত আইন জারী করতে সক্ষম হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আমরা আফগানিস্তানের স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যদ্বয় নূরিস্তান ও কুনাড় এর নাম বিষেশভাবে উল্লেখ করতে পারি। এ যুগের একজন শ্রেষ্ঠ আহলে হাদীস মনীষা মাত্র কয়েকদিন পূর্বে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। তিনি হলেন শায়খুল মাশায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায (মৃঃ ১৪২০ হিঃ)।
উপসংহার
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের সার্বভৌম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের নাম আহলে হাদীস আন্দোলন। ইসলামের শুরু থেকে অদ্যাবধি এই আন্দোলন অব্যাহত আছে। এই আন্দোলন নতুন কোন মাযহাব বা দলের নাম নয়। সাহাবীগণ ও তাঁদের শিষ্যমন্ডলী যেই আন্দোলন করতেন এবং যেই নামে পরিচিত হতেন আহলে হাদীসগণও সেই আন্দোলনই করে যাচ্ছেন এবং সেই একই নামে পরিচিত হচ্ছেন। তাঁরা প্রগতির নামে বিহাতীয় মতবাদ এবং ধর্মের নামে মাযহাব বা দলীয় সংকীর্ণতাবাদের উধের্্ব থেকে কুরআন হাদীসের আলোকে জাতির পুনর্গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন মুসলিম সমাজকে এক ও অভিন্ন মহাজাতিতে পরিণত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই কাজ এত ব্যাপক ও কণ্টকাকীর্ণ যে, আহলে হাদীস আন্দোলনের নেতা-কর্মীগণ সব সময় সমবেতভাবে একই নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনি। তাই দেখা যায় যে, তাঁরা বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। কোন যুগে তাবলীগ ও অধ্যাপনায় তাঁরা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। আর কোন যুগে তাঁরা লেখনী ও তর্কযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। আবার কোন কোন যুগে দেখি তাঁর বাতিলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে শহীদ বা গাযী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করছেন। ইত্যাদি-
আন্দোলনের এই মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কারণেই আজকের পৃথিবীর সকল শান্তি প্রিয় মানুষ করছে এত্দ উত্তর উত্তর ব্যাপক সমৃদ্ধি। হে আল্লাহ ! এই কামনা কবুল করুন। আমীন, আমীন, ছুম্মা আমীন।
তথ্যসূত্র
১. আল-কুরায়শী, মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফী: আহলে হাদীস পরিচিত (ঢাকা ঃ আল-হাদীস প্রিন্টিং, ২য় সংস্কঃ ১৯৮৩ খৃঃ)
২. আল বাগদাদী, আহামদ আল-খতীব: শরাফু আছহাবিল হাদীস, পৃঃ ১২, উদ্ধৃত- আহলে হাদীস আন্দোলন, পৃঃ ৫১।
৩. ইবনে হাযর, আবু মুহাম্মদ: কিতাবুল কিছাল (বৈরুত ঃ মাকতাবাতুল খাইরাত, ১৯০৩ খৃঃ) ২য় খণ্ড, ১১৫ পৃঃ।
৪. শাহ ওয়ালিউল্লাহ: হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ (কায়রো, দারুত তুরাছ আল-আরাবী ১৯৩৬ খৃঃ) খণ্ড ঃ ১, পৃঃ ১৫৩।
৫. আল-কুরায়শী, মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফি: ফিরকাবন্দী বনাম অনুসরণীয় ইমাম গণের নীতি (ঢাকা ঃ আল-হাদীস প্রিন্টিং, ১ম সংস্কঃ ১৯৬৩ খৃঃ) পৃঃ ১৭, ১৮।

No comments:

Post a Comment