Monday, May 6, 2013

হাদীছের পরিচিতি

লিখেছেন আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ (حفظهما الله)   
হাদীছ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো:- নতূন। এর বহুবচন হলো- আহাদীছ।
পারিভাষিক অর্থে রাছুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم থেকে যা কিছূ কথা, কাজ ও বিভিন্ন কথা-কাজের প্রতি তাঁর সমর্থন এবং তাঁর দৈহিক ও চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তাকে হাদীছ বলে

(এক কথায় বলা যায়, রাছুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন, যা কিছুর প্রতি তাঁর অনুমোদন ও সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে এবং তাঁর দৈহিক বিবরণ ও চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সে সব কিছুকেই হাদীছ বলে।
আছার কাকে বলে?
আছার শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো: কোন বিষয় বা বস্তুর অবশিষ্টাংশএর বহুবচন হলো “ আছা-র
পারিভাষিক অর্থে- শরী‘য়ত বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম رضوان الله عليهم أجمعين থেকে যা কিছু কথা ও কাজ বর্ণিত বা উদ্ধৃত হয়েছেতাকে আছার বলা হয়   তবে কেউ কেউ বলেছেন যে হাদীছ এবং আছার-দু‘টো একটি অপরটির সমার্থক ও প্রতিশব্দ।
খবর কাকে বলে?
খবর শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো: সংবাদ। এর বহুবচন হলো: আখবার। পারিভাষিক অর্থে কেউ কেউ বলেছেন যে খবর এবং হাদীছ একই বিষয় এবং  এ দু‘টি একটি অপরটির সমার্থক বা প্রতিশব্দ। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, খবর  এবং হাদীছ দু‘টি  ভিন্ন ভিন্ন বিষয়।  হাদীছ হলো- যা কিছু রাছূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم থেকে কিংবা রাছূল صلى الله عليه وسلم সম্পর্কে বর্ণিত বা উদ্ধৃত, আর খবর হলো যা কিছুরাছুল صلى الله عليه وسلم ব্যতীত অন্য কারো থেকে উদ্ধৃত বা বর্ণিত। আর কেউ কেউ বলেছেন যে, হাদীছ হলো যা শুধুমাত্র রাছুল صلى الله عليه وسلم থেকে বর্ণিত, আর খবর হলো যা রাছুল صلى الله عليه وسلم কিংবা অন্য যে কারো  থেকে বর্ণিত।


সূত্রঃ- আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ (حفظهما الله) সংকলিত পুস্তিকা “মিন আতইয়াবিল মানহি ফী ‘ইলমিল মুসতালাহ”। মদীনা ইছলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনী।



                                           হাদীছের শ্রেনী ও প্রকারভেদ:

লিখেছেন আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ (حفظهما الله)   
হাদীছের শ্রেণী ও প্রকারভেদ:
ছনদ তথা বর্ণনাধারার শেষ বা চুড়ান্ততা বিবেচনায় হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
ছনদ তথা বর্ণনাধারার শেষ বা চূড়ান্ততা বিবেচনায় খবর/হাদীছ তিন প্রকার

(১) মারফু‘ (২) মাওক্বোফ (৩)  মাক্বতূ‘
হাদীছ বা খবরে মারফূ‘ কাকে বলে এবং তা কত প্রকার ও কি কি?
যে সব কথা কিংবা কাজ কিংবা সম্মতি ও অনুমোদন স্পষ্টতঃ শব্দগতভাবে কিংবা বিধানগতভাবে রাছূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত, তাকে মারফূ‘ হাদীছ বলে।
অন্য কথায় যে বর্ণনাধারা বা বর্ণনাসূত্র (ছানাদ) রাছুল صلى الله عليه وسلم পর্যন্তপৌছেছে, তাকে মারফূ‘ হাদীছ বা খবরে মারফূ‘ বলা হয়।
খবরে মারফূ‘ ছয় প্রকার।
। সুস্পষ্ট বাচনিক মারফূ‘ হাদীছ (المرفوع القولى صريحا)
 যেমন:- কোন সাহাবীর একথা বলা যে, “আমি রাছূুল্লাহ-কে (صلى الله عليه وسلم)এই--- এই  বলতে শুনেছি” অথবা কোন সাহা্বী কিংবা অন্য কারো একথা বলা যে, “রাছুল صلى الله عليه وسلم  এই--- এই বলতেন”
। কর্মসম্পর্কিত সুস্পষ্ট মারফূ‘ হাদীছ (المرفوع الفعلى صريحا)
 যেমন:- কোন সাহাবীর একথা বলা যে, “আমি রাছূলকে (صلى الله عليه وسلم) এই------এই করতে দেখেছি” অথবা কোন সাহাবী বা অন্য কেউ রূপ বলা যে, “রাছুলصلى الله عليه وسلم এই----- এই করতেন”
। সুস্পষ্ট অনুমতি বা অনুমোদনমূলক মারফূ‘ হাদীছ (المرفوع التقريرى صريحا) যেমন:-কোন সাহাবীর একথা বলা যে “আমি রাছুল صلى الله عليه وسلم এর উপস্থিতিতে এই --করেছি” কিংবা কোন সাহাবী বা অন্য কেউ একথা বলা যে, “অমুক ব্যক্তি রাছুলصلى الله عليه وسلم এর উপস্থিতিতে এই এই করেছেন” আর রাছুল صلى الله عليه وسلمকার্যটিকে অস্বীকার করেছেন মর্মে কোন কিছু উল্লেখ না করা।
। বিধানগতভাবে বাচনিক মারফূ‘ বর্ণনা (المرفوع القولى حكما)
যেমন- এমন কোন সাহাবী কর্তৃক, যিনি আহলে কিতাবদের থেকে কোন কথা গ্রহণ করেন বলে জানা নেই, এমন কোন কথা বলা যাতে যুক্তি, ইজতিহাদ, নিজস্ব অভিমত বা চিন্তা গবেষণনার কোন অবকাশ নেই। এমনিভাবে অচেনা-অদ্ভুত কোন বর্ণনার সাথে কথাটির কোন সম্পর্ক নেই কিংবা কথাটি দূর্বোধ্য কোন বর্ণনার ব্যাখ্যা ও নয়। উদাহরণ স্বরূপ, যেমন:- কোন সাহাবী কর্তৃক অতীতের কোন সংবাদ দেয়া (যেমন-জগত সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে কোন সংবাদ দেয়া) কিংবা ভবিষ্যতের কোন বিষয়ের সংবাদ দেয়া (যেমন- ক্বিয়ামতের পূর্বে সংগঠিত ফিতনা, ক্বিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা সংবাদ দেয়া) কিংবা কোন কাজের বিশেষ কোন প্রতিদান বা শাস্তির সংবাদ দেয়া ইত্যাদি।
 কার্যত বিধানগত মারফূ‘ বর্ণনা  (المرفوع الفعلى حكما)
যেমন: কোন সাহাবী কর্তৃক এমন কোন কাজ করা, যাতে নিজস্ব যুক্তি, অভিমত বা চিন্তা –গবেষণার কোন অবকাশ নেই। উদাহরণ স্বরূপ যেমন:- ‘আলী رضى الله عنهকর্তৃক সূর্যগ্রহণের নামাযে প্রতি রাকা‘আতে একাধিক রুকূ‘ করা।
। বিধানগতভাবে অনুমোদিত মারফু‘ বর্ণনা (المرفوع التقريرى حكما)  
যেমন: কোন সাহাবী কর্তৃক এরকম সংবাদ প্রদান করা যে, তারা রাছুল صلى الله عليهوسلم এর যোগে এই-----এই করতেন, অথচ রাছুল صلى الله عليه وسلم তাদেরকে নিষেধকরতেন না বা মন্দ বলতেন না
মারফূ‘র বিধান সম্মলিত আরো যে সব বাক্য রয়েছে (অর্থাৎ- যে সব বাক্য কোন বর্ণনার ছনদ মারফূ‘ হওয়া প্রমাণ করে) তম্মধ্যে হলো যেমন: কোন সাহাবীর একথা বলা যে, “এই কাজ হলো ছুন্নাত আমাদের এই এই কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে আমাদেরকে এই কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অথবা কোন ছাহাবী কর্তৃক কোন কাজ সম্পর্কে এরূপ বলা যে “এটা হলো আল্লাহ سبحانه وتعالى কিংবা রাছুল صلى الله عليه وسلم এর আনুগত্য-মূলক কিংবা অবাধ্যতা-মূলক কাজ
যেমন: ‘আম্মার বিন ইয়াছির رضى الله عنه এর কথাঃ- যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ দিনেরোযা পালন করল, সে আবুল ক্বাছিম (মোহাম্মাদ  صلى الله عليه وسلم) এর অবাধ্যতা করল এই আছারটি ছুনান গ্রন্থকারগণ তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
খবরে মাওক্বোফ কাকে বলে?
যে সব কথাকাজ কিংবা সম্মতি ও অনুমোদন রাছূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم এর কোন সাহাবীর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত, তাকে মাওক্বোফ হাদীছ বলে।
অন্য কথায়, যে হাদীছের বর্ণনাধারা বা ছানাদ কোন সাহাবী (رضى الله عنه) পর্যন্তপৌছেছে, তাকে মাওক্বোফ হাদীছ বা খবরে মাওক্বোফ বলা হয়।
খবরে মাওক্বোফকে আছারে ছাহাবী ও (أثر الصحابة) বলা হয়।
খবরে মাক্বতূ‘ কাকে বলে?
যে সব কথা বা কাজ কোন তাবি‘য়ী  কিংবা তাঁর পরবর্তী কারো প্রতি সম্বন্ধযুক্ত, তাকে মাকতূ‘ হাদীছ বলে।
অন্য কথায়, যে বর্ণনা বা খবরের বর্ণনাধারা অর্থাৎ ছানাদ কোন তাবি‘য়ী (رحمه الله)কিংবা তাবে‘য়ে তাবি‘য়ী পর্যন্ত পৌছেছে, তাকে খবরে মাওক্বোফ বলা হয়।
খবরে মাওক্বোফকে আছারে তাবি‘য়ীও (أثر التابعى) বলা হয়।

সূত্রঃ- আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ (حفظهما الله) সংকলিত পুস্তিকা “মিন আতইয়াবিল মানহি ফী ‘ইলমিল মুসতালাহ”। মদীনা ইছলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনী।



                                                    হাদীছে ক্বোদছী:

লিখেছেন আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ (حفظهما الله)   
আল্লাহ্‌র (سبحانه وتعالى) যে বক্তব্য আল্লাহ্‌র উদ্ধৃতি দিয়ে রাছুল صلى الله عليه وسلم এর নিজ ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে, তাকেই হাদীছে ক্বোদছী বলা হয়
হাদীছে ক্বোদছী এবং ক্বোরআনুল কারীমের মধ্যে পার্থ্যক্য হলো এই যে, ক্বোরআনুল কারীমের শব্দ, বাক্য, বিষয়-বস্তু মোটকথা সবকিছু আল্লাহ্‌র (جل وعلا)পক্ষ থেকে জিবরাঈল عليه السلام এর মাধ্যমে রাছূল صلى الله عليه وسلم নিকট নাযিলকৃত এটি আল্লাহর  (عز وجل)সুমহান বাণী, এর শব্দগুলো অলৌকিক ও অনুপমেয়। এর তিলাওয়াতের দ্বারা ‘ইবাদত করা হয় এবং তা বহুল বর্ণিত ওঅকাট্যভাবে প্রমাণিত। পক্ষান্তরে হাদীছে ক্বোদছীর মূল বক্তব্য তথা বিষয়-বস্তু আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে নাযিলকৃত, তবে এর শব্দ ও বাক্যগুলো অলৌকিক ও অনুপমেয় নয়। এগুলো হলো রাছূল صلى الله عليه وسلم এর চয়নকৃত, অর্থাৎ আল্লাহ্‌র(جل وعلا) বক্তব্য, রাছূল صلى الله عليه وسلم নিজ ভাষায় বর্ণিত বা উদ্ধৃত হাদীছে ক্বোদছী পাঠের দ্বারা ‘ইবাদত করা হয় না এবং তা বহুল ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হওয়া শর্ত নয় হাদীছের বিশাল ভান্ডারে প্রায় শতাধিক হাদীছে ক্বোদছী বর্ণিত রয়েছে। যেমন সহীহ মুছলিমে আবূ যার আল গিফারী رضى الله عنه  থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহصلى الله عليه وسلم বলেছেন যে, আল্লাহ سبحانه وتعالى ইরশাদ করেছেনঃ-
يا عبادى إنى حرمت الظلم على نفسى وجعلته بينكم محرما فلا تظالموا. (رواه مسلم)
অর্থঃ- হে আমার বান্দাহগণ! আমি আমার নিজের জন্য যুল্‌মকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছি এবং এটাকে তোমাদের মধ্যেও হারাম সাব্যস্ত করে দিয়েছি,অতএব তোমরা এক অপরের প্রতি যুল্‌ম করো না। (সহীহ মুছলিম)

সূত্র:- আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ (حفظهما الله) সংকলিত পুস্তিকা “মিন আতইয়াবিল মানহি ফী ‘ইলমিল মুসতালাহ”। মদীনা ইছলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনী।

No comments:

Post a Comment